বন্ধুরা সবাইকে সুস্বাগতম santantu study hub এর পক্ষ থেকে |আজকে আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করবো ভৌতবিজ্ঞানের "পরমাণুর গঠন (Atomic structure) এর সংক্ষিপ্ত আলোচনাQ:1. পরমাণু কাকে বলে? পরমাণুর মূল উপাদান বা মৌলিক কণাগুলি কি কি??
✍️পরমাণু ::মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কনার মধ্যে মৌলটির সব ধৰ্ম বর্তমান থাকে এবং যে কনা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণু বলে ||
পরমাণু তিনটি মূল কণিকা দ্বারা গঠিত |
i)ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কনা ইলেকট্রন
ii)ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কনা প্রোটন
iii)নিস্তড়িত কনা নিউট্রন
Q2:ইলেকট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন কনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও???
✍️ইলেকট্রন,::তড়িৎ মোক্ষননলে গ্যাসের চাপ 0•01 মিমি পারদস্তম্ভর সমান রেখে ক্যাথোড এবং এনোড এর মধ্যে উচ্চ -বিভব প্রভেদ প্রয়োগ করলে দেখা যায় ক্যাথোড থেকে একধরণের অদৃশ্য রশ্মি আনোডের দিকে নির্গত হয় এবং ক্যাথোডের বিপরীত দিকে কাঁচের দেওয়ালে প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে |ক্যাথোড থেকে নির্গত এই রশ্মির নাম ক্যাথোড রশ্মি | বিজ্ঞানী টমসন পরীক্ষা দ্বারা প্রমান করেন যে, ক্যাথোডরশ্মি ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কণার সমষ্টি এবং তিনি এই কোন গুলির নাম দেন ইলেকট্রন | সুতরাং ইলেকট্রন ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কণা | সব মৌলের পরমাণুর মূল কণা হলো ইলেকট্রন
🔥ইলেকট্রনকে e বা 0e-1 চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয় |
🔥ইলেক্ট্রনের ভর =9•11×10^-28 গ্রাম (সি. জি. এস. এককে |এবং 9•11×10^-31 কিগ্রা (এস. আই. এককে )|
🔥ইলেক্ট্রনের তড়িৎ আধান =4.8×10^-10 esu (সি. জি. এস. এককে ) এবং 1.6×10^-19 কুলম্ব(এস. আই. এককে )|আধানের প্রকৃতি ঋনাত্বক |
🔥এর চেয়ে কম তড়িৎআধান -বিশিষ্ট কোনো কণা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে ইলেকট্রনের তড়িৎআধান কে তড়িতের প্রাথমিক একক বলা হয় |
🔥ইলেকট্রনের ব্যাস =5•6×10^-13 সেমি (সি. জি. এস. এককে ) এবং 5•6×10^-15 মিটার (এস. আই. এককে )|
✍️প্রোটন :পরমাণু নিস্তড়িত অর্থাৎ তড়িৎ -নিরপেক্ষ | তাই প্রত্যেক মৌলের পরমানুর মধ্যে ইলেক্ট্রন থাকলে নিশ্চয় পরমাণুর মধ্যে সামপরিমান ধনাত্বক আধান থাকে | বিজ্ঞানী গোল্ডেস্টাইন খুব কম চাপে বায়ুপূর্ণ একটি তড়িৎ মোক্ষননলে ছিদ্রযুক্ত ক্যাথোড নিয়ে এবং তার মধ্যে তড়িৎ চালনা করে দেখান যে, ক্যাথোড রশ্মি নির্গত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনোড থেকে ক্যাথোডএর দিকে একপ্রকার অদৃশ্য রশ্মি নির্গত হয় এবং এই রশ্মি ক্যাথোড এর ছিদ্র অতিক্রম করে তীব্র বেগে সরলরেখায় বেরিয়ে যায় |এই রশ্মি ঋনাত্বক তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা আকৃষ্ট হয় |সুতরাং প্রমাণিত হয় যে,এই রশ্মি পজিটিভ বা ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্ত কণার সমষ্টি | টমসন এই রশ্মির নাম দেন পজিটিভ রশ্মি | গ্যাসীয় পদার্থের পরমানু থেকে এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এই রশ্মির সৃষ্টি হয় | দেখা যায় যে, হাইড্রোজেন থেকে যে পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণা পাওয়া যায় তার ভর হাইড্রোজেন পরমানুর ভরের প্রায় সমান |বিজ্ঞানীরা এই ক্ষুদ্র পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণার নাম দেন প্রোটন |সুতরাং, একটি হাইড্রোজেন পরমানু থেকে একটি ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন হলে যে ধনাত্বক কণা পাওয়া যায়, সেটি হলো প্রোটন অর্থাৎ ইলেক্ট্রন -বর্জিত হাইড্রোজেন পরমানু কে প্রোটন বলে বা H+ আয়নই হলো প্রোটন |
🔥প্রোটনকে p বা 1H^1 চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয় |
🔥প্রোটন এর ভর =1.6725×10^-24 গ্রাম (সি. জি. এস. এককে ) এবং 1.6725×10^-27 কিগ্রা( এস. আই. এককে)
🔥প্রোটন এর তড়িৎদাধান =একটি প্রোটন এর তড়িৎ পরিমান ইলেকট্রনের তড়িৎ পরিমানের সমান কিন্তু বিপরীত |এই কনায় পজিটিভ তড়িৎ এর পরিমান 4•8×10^-10 esu (সি. জি. এস. এককে ) এবং 1•6×10^-19 কুলম্ব(এস. আই. এককে)
🔥এর চাইতে কম ধনাত্বক আধানযুক্ত কোনো কণার কথা আমাদেরও জানা নাই |
🔥প্রোটন এর ব্যাস =2•4×10^-13 সেমি (সি. জি. এস. এককে ) এবং 2•4×10^-15 মিটার (এস. আই. এককে)
🔥একটি প্রোটন কণার ভর একটি ইলেকট্রন কণার ভরের 1837 গুন | ইলেক্ট্রন এর মতো প্রোটন ও পরমাণুর একটি মূল উপাদান
✍️নিউট্রন: 1932 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী স্যাডউইক নিউট্রন কণা আবিষ্কার করেন |1930 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী বোথে এবং বেকার লক্ষ্য করেন যে তীব্র গতিসম্পন্ন আলফা কণা বেরিলিয়াম ধাতুকে আঘাত করলে ওই ধাতু থেকে উচ্চ ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন এক ধরণের রশ্মি নির্গত হয় |এই রশ্মি তড়িৎ ক্ষেত্রে বা চৌম্বকক্ষেত্রে দ্বারা প্রভাবিত হয়না | সুতরাং, এই রশ্মি তড়িৎ নিরপেক্ষ | তড়িৎ নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য এই রশ্মিগুলির ভেদন ক্ষমতা প্রোটন বা ইলেকট্রন এর চেয়ে অনেকে বেশি| বোথে এবং বেকার ভুল করে এই রশ্মিকে গামা (¥) রশ্মি বলে মনে করেন | 1932 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী স্যাডউইক প্রমান করেন, এই রশ্মি হলো নিস্তড়িত কণার স্রোত এবং এইটা কণার ভর প্রোটন কণার ভরের থেকে সামান্য বেশি | তিনিই এই কণাগুলির নাম দেন নিউট্রন |নিউট্রনও প্রোটন ও ইলেকট্রনের মতো পরমাণুর একটি মূল উপাদান |একমাত্র সাধারণ হাইড্রোজেন ছাড়া বাকি সব মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মধ্যে নিউট্রন আছে |পরমাণুর মধ্যে নিউট্রন থাকায় পরমাণুর ভর বাড়ে | নিউট্রন নিস্তড়িত কণা |
🔥নিউট্রনকে n বা ০n1 দ্বারা প্রকাশ করা হয় |
🔥নিউট্রন এর ভর =1.675×10^-24 গ্রাম((সি. জি. এস. এককে ) এবং 1.675×10^-27 কিগ্রা এস. আই. এককে)
🔥নিউট্রনর তড়িৎদাধান :নিউট্রনর কোনো আধান নেই, নিউট্রন একটি নিস্তড়িত কণা |
🔥 নিউট্রন এর ব্যাস =2.4×10^-13 সেমি (সি. জি. এস. এককে ) এবং 2.4×10^-15 মিটার (এস. আই. এককে)
Q3:ইলেক্ট্রন ও প্রোটোনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা করো
✍️সাদৃশ্য- i)ইলেক্ট্রন পরমানুর মূল উপাদান |
i)প্রোটনও পরমানুর মূল উপাদান |
ii) ইলেক্ট্রন স্থায়ী প্রকৃতির প্রাথমিক কণা
প্রোটনও স্থায়ী প্রকৃতির প্রাথমিক কণা|
iii) ইলেক্ট্রন তড়িৎগ্রস্থ কণা
প্রোটনও তড়িৎগ্রস্থ কণা|
iv) প্রত্যেক পরমানুতে ইলেক্ট্রন ও প্রোটোনের সংখ্যা সমান |
প্রত্যেক পরমানুতে প্রোটোনের ও ইলেক্ট্রন সংখ্যা সমান |
V)ইলেক্ট্রন এর আধানের পরিমান হলো 1.6×10^-19 কুলম্ব বা 4.8 ×10^-10 esu
প্রোটোনের ও আধানের পরিমান 1.6×10^-19 কুলম্ব বা 4.8 ×10^-10 esu|
Vi) ইলেক্ট্রন তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্রে দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়
প্রোটন ও তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্রে দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়|
Vii) ইলেক্ট্রন গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে
প্রোটন ও গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে|
Viii) ইলেক্ট্রন ফোটোগ্রাফিক প্লেটে বিক্রিয়া ঘটায়
প্রোটন ও
ফোটোগ্রাফিক প্লেটে বিক্রিয়া ঘটায়|
✍️✍️বৈসাদৃশ্য 👉👉
i) ইলেকট্রন ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কণা
👉প্রোটন ধনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কনা |
ii) ইলেকট্রন এর ভর অতি নগন্য | একটি ইলেকট্রনের ভর 9•11×10^-28 গ্রাম|
👉একটি প্রোটন এর ভর একটি ইলেক্ট্রনের ভরের প্রায় 1837 গুন | একটি প্রোটন এর ভর 1.675×10^-24 গ্রাম |
iii) ইলেক্ট্রনের ব্যাস =5.6×10^-13 সেমি (প্রায় )
👉প্রোটোনের ব্যাস =2.4 × 10^-13 সেমি (প্রায় )|
iv) পরমানুর মধ্যে, কিন্তু নিউক্লিয়াসের বাইরে বিভিন্ন কক্ষে আবর্তন করে,
👉প্রোটন পরমানুর নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে |
V) পরমানু থেকে এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন কে অপসরণ করা যায় |আবার পরমানুতে এক বা একাধিক ইলেকট্রন যোগ করা যায় |
👉পরমানুর নিউক্লিয়াস থেকে প্রোটন কে অপসারণ করা অথবা নিউক্লিয়াসে বাড়তি প্রোটন যোগ করা বিশেষ কষ্টসাধ্য|প্রোটন অপসারিত বা যুক্ত হলে মৌলটি পরিবর্তিত হয়ে নতুন মৌলের সৃষ্টি হয় |
vi) পরমানুর ভর ইলেক্ট্রনের সংখ্যার উপর নির্ভর করে না |
👉 পরমানুর ভর নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যার উপর নির্ভর করে |
Vii) ইলেকট্রন পাতলা ধাতব পাত কে ভেদ করতে পারে |
👉প্রোটোনের ভেদন ক্ষমতা খুব কম