ভগিনী নিবেদিতা ::এক মহিয়সী নারীর জীবনকথা (১৮৬৭,২৮অক্টোবর ----১৯১১,১৩ অক্টোবর ) উত্তর আয়ারল্যান্ডের সুবিখ্যাত নোবেল পরিবারে এই মহিয়সীর জন্ম |পিতামহ রেভারেন্ড জন নোবেল স্থানীয় প্রোটেস্থান ওয়েসলিয়াম চার্চের ধর্মজাজক হয়েও আয়ারল্যান্ডের মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয় সহযোগিতা করে স্বদেশ প্রেমিক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন |কিন্তু দুর্ভাগ্যর বিষয় তার পত্নী মারগারেট এলিজাবেথ নীলাস মাত্র পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সেই এই ধর্ম প্রাণ তেজস্বী পতিকে হারালেন |এলিজাবেথ এর চতুর্থ সন্তান রিচমন্ড বয়প্রাপ্ত হলে মেরি ইশাবেলা নামক এক প্রতিবেশিনীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হলেন |কিছুকাল পরে মেরি ইশাবেলা অন্ত :সত্বা হলে আকুলকণ্ঠে দেবতার উদ্দেশ্যে জানালেন, "প্রভু, যদি নিরাপদে আমার সন্তানের জন্ম হয়, তাহা হইলে তোমার চরণেই আমি তাহাকে সমর্পন করিব |"১৮৬৭ সালের ২৮ শে অক্টোবর
সুপ্ত ধরণীর নিদ্রাভঙ্গ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সন্তান ভূমিষ্ট হলো |নবজাত শিশুর রূপ দর্শন করে মাতা মেরি অসহ্য প্রসব ব্যাথা নিমেষেই ভুলে গেলেন |দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ও আনন্দ সজল চোখে মা শিশুকে দেবতার চরণে মনে মনে সোঁপে দিলেন |স্যামুয়েল কন্যার স্নেহময়ী বৃদ্ধা পিতামহী মারগারেট এলিজাবেথ নীলাসের নামের সঙ্গে মিল রেখে নাম দিলেন মারগারেট এলিজাবেথ নোবেল |
মারগারেট ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমতী |শৈশব পেরিয়ে কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিক্ষনেই তাঁর প্রতিভার প্রকাশ |বুদ্ধিজীবী মহলে পরিচয় লাভ করেছিলেন তাঁর গভীর অধ্যয়ণ, ধর্ম, বিজ্ঞান, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনার সুবাদে |আর সেই সুবাদেই দার্শনিক বর্ণাড শ, বৈজ্ঞানিক টি.এইচ. হাক্সলে ও কবি ইয়েটসের সাথে মারগারেটের গভীর অন্তরঙ্গতা তৈরী হয়েছিল |সেইসঙ্গে রাজনীতির অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দৃঢ়তার দরকার তা তিনি অর্জন করেছিলেন রাশিয়ার খ্যাতনামা বৈপ্লবিক নেতা প্রিন্স ক্রাপটিনের লেখা পড়ে ও তাঁর ব্যাক্তিগত সান্নিধ্যে এসে |নিজের দেশে এত খ্যাতি প্রতিপত্তি, প্রভাব সত্বেও কেন মারগারেট ছুটে এলেন ভারত মাতার আহ্বানে, ভারত মাতার কোলে??
অনমনীয় ব্যক্তিত্ব, অসীম সাহস আর সমগ্র মানবজাতির জন্য অপরিসীম মায়া- মমতা তাঁকে কোনো ক্ষুদ্র গন্ডিতে আবদ্ধ রাখতে পারলো না | কোন মহৎ কাজে আত্মহুতি দেওয়ার জন্য তাঁর মন ছটপট করতে লাগলো |
১৮৯৫ সালের অক্টোবর মাস -কুয়াশা আচ্ছন্ন এক শীতের সকালে মারগারেট সন্ধান পেলেন অপ্রত্যাশিত সূর্যালোকের | সকালে সংবাদপত্রে পাঠ করলেন এক হিন্দু যোগীর আগমন সংবাদ --লন্ডনের আকাশে তাঁর আবির্ভাব |২২ শে অক্টোবর পিকাডিলিশ প্রিন্সেস হল নামক অভিজাত বক্তৃতাহলে লন্ডনবাসী বুদ্ধিজীবীগন সেদিন এই হিন্দুযোগী স্বামী বিবেকানন্দের "আত্মজ্ঞান " সম্বন্ধে বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হলেন | প্রিন্সেস হলে উচ্চারিত ধ্বনি দিকদিগন্তে প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠলো |সেই প্রতিধ্বনি মারগারেটের হৃদয়াকাশেও এক মহা আলোড়নের সৃষ্টি করল| মারগারেট অস্থির হয়ে উঠলেন - বুঝিবা পথের সংকেত পাওয়া যাবে |কি এক অজানা আহ্বানের প্রতীক্ষায় তিনি উদগ্রীব, চঞ্চল |এমনই সংকট মুহূর্তে এবেঞ্জার কুক সংবাদ দিলেন যে, সি :ইটি স্টাডির বাসায় জনৈক হিন্দু সন্ন্যাসী সম্প্রতি অবস্থান করছেন |তিনি লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডে লেডি ইসাবেল মার্গসনের বাড়িতে এক ঘরোয়া বৈঠকে তিনদিন আলোচনা করবেন | কৌতূহলক্রান্ত হয়ে নির্দিষ্টদিনে মারগারেট নোবল লেডি ঈসাবেলের বাসায় উপস্থিত হলেন |গিয়ে দেখলেন গৈরিক আলা খাল্লা পরিহিত প্রশান্ত গম্ভীর মূর্তি, সুললিত সুন্দর গঠন, তেজদীপ্ত হাস্যজ্বল মুখমন্ডল |আর চাহনিতে যেন যেন স্বর্গীয় শান্তি সুধা | মারগারেটের প্রতিজ্ঞা ছিল তিনি করোও কাছে মাথা নোয়াবেন না | কিন্তু সেই ভারতীয় যোগীর ব্যাক্তিতে, প্রতিভায়, পবিত্রতায় মুগ্ধ হয়ে মারগারেটের সমস্ত অহংকার চূর্ণ হয়ে গেলো |তাঁর পায়ে নাতজানু হয়ে পড়লেন এবং তাকেই গুরু ও আদর্শ বলে মেনে নিলেন |বলাবাহুল্য সেই যোগী হলেন স্বামী বিবেকানন্দ |স্বামীজী আহ্বান করলেন তাঁকে ভারতবর্ষের কাজে |স্বামীজীর সেই আহ্বান এ এমনি স্বর্গীয় শান্তি , পবিত্রতা নিহিত ছিল --- যা উপেক্ষা করার সাধ্য মারগারেটের ছিল না |
স্বামীজীকে এই প্রথম দর্শনের স্মৃতি মারগারেট তাঁর "the master as i saw him" গ্রন্থে লিখেছেন ------"স্বামীজী তাহার গেরুয়া পোশাক ওঃ কোমর বন্ধ পড়িয়া আমাদের মধ্যে বসিয়াছিলেন --যেন আমাদের নিকট কোনো দূর দেশের বার্তা বহন করিয়া আসিয়াছেন |
১৮৯৮ খ্রি : ২৮ শে জানুয়ারী জাহাজ কলিকাতা বন্দরে পৌছালো |স্বামীজী স্বয়ং উপস্থিত থেকে আপন মানস কন্যাকে স্বাগত জানালেন |স্বামীজী ছাড়া সবাই অপরিচিত, অপরিচিত দেশ, অপরিচিত মানুষজন | কিন্তু ভারতমাতা যেন স্বস্নেহে মারগারেটকে আলিঙ্গন করলেন সবার উপরে |স্বামীজীর সংস্পর্শে আসে মারগারেট চিন্তায় অনেক খোরাক পেলেন | তিনি সেই চিন্তা, পবিত্র শিক্ষা ও আদৰ্শ হৃদয়ে ধারণ করে আধ্যাত্মিক চিন্তাসাগরে নিমগ্ন হলেন |
ভারতে আসার দিন কয়েকের মধ্যেই গুরু তাঁকে দীক্ষা দিয়ে নিবেদন করলেন ভারত মাতার কাজে |মারগারেট কে ব্রহ্মচার্য ব্রতে দীক্ষিত করার জন্য স্বামীজী কিছুদিন যাবৎ গভীর ভাবে চিন্তা করছিলেন | এতদিন মারগারেটের প্রস্তুতির প্রতীক্ষায় ছিলেন |স্বামীজীর পুন্য স্বসর্গে ও অধ্যাত্ব শিক্ষার প্রভাবে মারগারেট এই শুভানুষ্ঠানের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন |কারণ এই পবিত্র ব্রত গ্রহণ করলে তাঁর বিচ্ছিন্ন জীবনধারা রামকৃষ্ণ সংঘের সমষ্টি জীবনের সঙ্গে মিলিত হয়ে সাবলীল ছন্দে প্রবাহিত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ লাভ করবে |১৮৯৮ সালের ২৫ শে মার্চ মারগারেটকে ব্রাহ্মচর্যব্রতে দীক্ষিত করার দিন ধার্য্য হলো | উক্তদিনে প্রভাতী মঙ্গলশঙ্খ বাজিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ নীলাম্বর মুখোপাধ্যায় এর উদ্যান বাটিতে ব্রাহ্মচার্যব্রতে দীক্ষিত করে 'নিবেদিতা '
নাম প্রদান করলেন |স্বামীজী নিবেদিতাকে বলেছিলেন ----
"সমাজ সংস্কারের সব তুচ্ছ ডোর ছিড়তে হবে | আত্মভাবনাকে ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণের বিরুদ্ধে অটল রাখতে হবে | ভোজন বিলাস বা আরামসজ্জার মতো শারদ শ্রীর উল্লাশ ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তির আয়োজন মাত্র, এই জানতে হবে | মানুষের অর্থহীন নিন্দাস্তুতিকে উপেক্ষা করবে, এই হলো আদর্শ "
এপ্রিলের শেষভাগে কলকাতায় ভীষণ প্লেগের প্রদুর্ভাব হলো | সংবাদ পেয়ে স্বামীজী দার্জিলিং থেকে দ্রুত বেলুড়ে ফিরে এলেন এবং গুরু ভাইদের সাথে মিলিত হয়ে প্লেগ নিবারণ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন | স্বামীজীর নির্দেশে নিবেদিতাকে সেই সেবাকার্যের সভাপতি ওঃ সম্পাদক করা হয় | সেই সেবা কার্যে নিবেদিতা নিজেকে নিঃস্বার্থ ভাবে উজাড় করে দিলেন | কোদাল হাতে নিয়ে বাগবাজার পল্লীর রাস্তাঘাট পরিষ্কার ওঃ প্লেগাক্রান্ত জনগণের সেবাকার্যে নিজেকে নিযুক্ত করলেন | মুগ্ধ বিস্ময়ে বাংলার -নরনারী দেখলেন এক অপরূপ কল্যাণ মূর্তি যেন মঙ্গলঘট সজ্জিত করে পূজার প্রদীপ জ্বেলে দিচ্ছে, আর তাঁর অন্তরে অফু রন্ত প্রেম ও করুনা আর্তজনের প্রাণে প্রাণে অসীম শান্তি ওঃ ভরসা এনে দিচ্ছে | নিবেদিতা নিজের জীবন কে জীবসেবায় উৎসর্গ করে নিবেদিতা নাম স্বার্থক করে তুললেন |
স্বামীজি নিবেদিতার সাহায্যে একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করলেন |প্রতিষ্ঠিত করার দিন ধার্য্য হলো ১৩ নভেম্বর কালীপূজার দিন | নির্দিষ্ট দিনে স্বামী বিবেকানন্দ ও স্বামী সারদানান্দ সমভিব্যাহরে ১৬ নং বোসপাড়া লেনে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পাদনের জন্য উপস্থিত হলেন শ্রী শ্রী মা (সারদা দেবী ) কে নিয়ে, প্রতিষ্ঠা কাজ কাজ শেষ হওয়ার পর শ্রীমা আশীর্বাদ করলেন,'মহামায়ার শুভাশিস বিদ্যালয়ের উপর শতধারে বর্ষিত হউক এবং এই বিদ্যায়তনে যে সকল বালিকা শিক্ষা লাভ করিবে তাহারা আদর্শস্থানীয় হউক |' নিবেদিতা সর্বপ্রথম এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করেছিলেন "শ্রী রামকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয়|" স্থানীয় অধিবাসী বৃন্দ ' নিবেদিতা স্কুল " এবং বিদেশিনীগন " বিবেকানন্দ স্কুল " বলে নিন্দে করতেন | প্রকৃত পক্ষে ১৮৯৮ খ্রি : যখন এটা রামকৃষ্ণ মিশনের অন্তর্ভুক্ত হয় তখনই এটি "রামকৃষ্ণ মিশন নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় " আখ্যাপ্রাপ্ত হয় |
ভাস্কর্য, চিত্রশিল্প, প্রভৃতি ভারতীয় কলা বিদ্যার প্রতি নিবেদিতার প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল | তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ভারতীয় কলা বিদ্যার মুলে আধাত্মিক তার বীজ নিহিত আছে | মেয়েদের হাতে আঁকা আলপনা, পেনসিল বা তুলির সাহায্যে অঙ্কিত আলেখ্য সকল নিবেদিতাকে উল্লসিত করে তুলত||
কখনো কখনো তিনি বালিকেদেরকে পাথরে বা মাটিতে ছাচ কাটার শিক্ষা দিতেন | এছাড়াও সংস্কৃত, ইতিহাস, ভূগোল, রাজস্থান কাহিনী, রামায়ণ, মহাভারত, ইত্যাদি গ্রন্থ গল্পচ্ছলে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতেন |যাতে করে স্বদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় লাভ করে মাতৃভূমির প্রতিটি জিনিসকে তারা আদর ও শ্রদ্ধা করার শিক্ষা পায় |
ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায়, আত্মবিশ্বাস ও ভগবত নির্ভরের জয় অনিবার্য | প্রথম প্রথম সনাতন পন্থী গোঁড়া হিন্দু সমাজ বিদেশী খ্রিস্টান মহিলাদের কাছে শিক্ষালাভের জন্য বালিকাদের পাঠাতে আপত্তি লাভ করলেন | কিন্তু নিবেদিতা খুব শীঘ্রই তারপর উদার মধুর ব্যবহার ও শিক্ষাদান কৌশলে সকলের চিত্ত জয় করে ফেললেন এবং ছাত্রী সংখ্যাও বাড়তে শুরু করলো | ইতিমধ্যে নিবেদিতা তাহার সুচিন্তিত বক্তৃতা ও রচনাবালীর মাধ্যমে সেই সময়কার শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেলেন | ভারতের অনেক খ্যাতনামা মনীষী ওঃ স্বদেশ প্রেমিক নিবেদিতার সঙ্গে পরিচয় করলেন এবং তার বহুমুখী প্রতিভা ও দেশ হিতৈষণা পরিচয় পেয়ে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন | বলাবাহুল্য, জাতি- ধর্ম - বর্ণ -নির্বিশেষে দেশবাসীর উপর প্রভাব বৃষ্টির হওয়ার অলক্ষিতে তার কর্মক্ষেত্রের পরিধিও দ্রুত প্রসার লাভ করলো |
ভারতীয় চিন্তা ধারাকে স্বকীয় ঐতিহ্য- এর পুন্য পথে পুনঃ প্রবাহিত করার জন্য নিবেদিতা কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং কিভাবে হৃদয়ের সমগ্র সম্পদ ভারতমাতার সেবায় অকুণ্ঠ চিত্তে ঢেলে দিয়ে সমগ্র ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছেন তার যদি স্মৃতিচারণ করা হয় তাহলে বিস্মিত হয়ে যেতে হয় | এই সময়ের কয়েকটি ঘটনা নিবেদিতাকে ভারত মাতার সেবায় আরো নিবিড় ভাবে জড়িত করে ফেলেছে | ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ আইন প্রবর্তন, এছাড়াও আরও কয়েকটি ঘটনা গোটা দেশে প্রবল চাঞ্চল্য ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল | এই সংকট মুহূর্তে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ উদাত্তকণ্ঠে শুনালেন ---
বাংলার মাটি বাংলার জল
বাংলার বায়ু বাংলার ফল
পুন্য হউক পুন্য হউক পুন্য হউক হে ভগবান|
নিবেদিতাও তৎকালীন বিশিষ্ট সংবাদপত্রে বিবিধ প্রবন্ধের মাধ্যমে এবং কখনোও বক্তৃতা মঞ্চে জ্বালাময়ী ভাষায় মুক্তি সংগ্রামে ইন্ধন জোগাতে লাগলেন | বাংলার "অমৃত বাজার পত্রিকা ' 'বিদেশের বোস্টোন হেরাল্ড ' প্রভৃতি প্রসিদ্ধ সংবাদ পত্রে নিবেদিতা ভারতের নির্যাতন কাহিনী ও ধুমায়িত বিপ্লববার্তা নির্ভয়ে প্রচার করলেন | "ইন্ডিয়া রিভিউ " পত্রিকায় তিনি স্পষ্টোভাবেই লিখলেন ----
"স্বদেশী শিক্ষা বাণিজ্যর জন্য মরনপন করিতে হইবে..... দেশবাসীর স্বজাতি সম্বন্ধে যে ন্যায় বুদ্ধি আজ জাগ্রত হয়েছে এই স্বদেশী আন্দোলন তাঁরই প্রতীক |"
১৯০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বারাণসী কংগ্রেসের স্মরণীয় অধিবেশন | এই সভায় বিদেশী বর্জন নীতি বিপুল উৎসাহ ও উত্তেজনার মধ্যে গৃহীত হয় | নিবেদিতা এই অধিবেশনে যোগদান করে ভারতীয় চিন্তা নায়কের কাছে আরও ঘনিষ্ট ভাবে পরিচিত হলেন | ভারতের নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যত ভারতের শুনির্দিষ্ট পন্থা সন্ধানের জন্য সুচিন্তক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নিবেদিতার সঙ্গে দিনের পর দিন অন্তরঙ্গ আলোচনা করে সুচিন্তিত নির্দেশ ও উদ্দীপনা লাভ করেছিলেন | এই সময়ের এক সান্ধ্য বৈঠক সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিখ্যাত "ভারত সেবক সংঘ " গঠিত হয় |
দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্ত সেবা, প্রচার ও সংগঠন মূলক নানা কাজে ব্যাস্ত থেকে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়েন | তিনি বিশ্রামের জন্য স্থানান্তরেই যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করলেন | দুবৎসর কার্যপদেশ ও স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে থাকার পর পুনরায় কলকাতা ফিরে এলেন |
১৯১১ সালের অক্টোবরের সূচনাতেই জগদীশ চন্দ্র বসু ও তার পত্নী অবলা বসুর আমন্ত্রণে নিবেদিতা বিশ্রামের জন্য দার্জিলিং -এ" রায় ভিলায় " গমন করলেন | অপ্রত্যাশিত ভাবেই এটা অল্পকালের মধ্যে কঠিন আমশয় রোগে আক্রান্ত হলেন | একে দুর্বল তার উপর মারাত্মক ব্যাধি | তিনি অচিরেই শরীর ও মনের তেজ দীপ্ততা হারিয়ে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করলেন এবং তিনি মৃত্যুর আগে সমস্ত অর্থ বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বেলুড় মঠের ট্রাষ্টির হাতে সোঁপে দিয়ে নিচিন্ত হলেন.
Tags:
জীবনী